একজন সত্যিকারের পর্যটক, তার পরবর্তী ভ্রমণে যাচ্ছেন, সর্বদা পরিকল্পনা করে থাকেন কোন দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। প্যারিসে এরকম অনেক জায়গা আছে - ল্যুভর, আইফেল টাওয়ার, চ্যাম্পস এলিসিস। তবে নিবন্ধে আমরা পার্ক সম্পর্কে কথা বলব, যা আপনাকে অবশ্যই নিজের চোখে দেখতে হবে। এটি লুক্সেমবার্গ গার্ডেন। শহরের ঐতিহাসিক অংশে অবস্থিত, এটি বিখ্যাত প্রাসাদ কমপ্লেক্সের অংশ, যেটি তার বিলাসিতা এবং আড়ম্বরপূর্ণভাবে ভার্সাই থেকে নিকৃষ্ট নয়।
ইতিহাসের একটি ভ্রমণ
ইতালীয় মারিয়া মেডিসি এই দুর্দান্ত পার্ক এবং প্রাসাদের উত্থানে অবদান রেখেছিলেন। 16 শতকে, রাজা হেনরি চতুর্থের বিধবা হওয়ার কারণে, তিনি একটি দেশের বাড়ির চারপাশে একটি বাগান তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা রাজধানীর কোলাহল থেকে দূরে অবস্থিত ছিল। প্রাসাদ প্রকল্পটি পালাজো পিত্তির চিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। মারিয়া তার শৈশবকাল কাটিয়েছে এতে (অনেক দূরে ফ্লোরেন্সে)। আপনি জানেন যে, এই ইতালীয় শহরটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য রত্ন এবং এখনও আধুনিক প্রকৌশলীদের বিল্ডিং ফর্মের জটিলতা এবং জাঁকজমক নিয়ে অবাক করে৷
মূল ধারণা অনুসারে, প্রাসাদ এবং পার্কের সমাহারে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, কৃত্রিম হ্রদ, সবুজ ফুলের বিছানা থাকার কথা ছিল। জন্যযাতে গাছপালা তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু পায় (এবং জমির প্লটটি যথেষ্ট বড় ছিল), 1613 সালে জলাশয়ের নির্মাণ শুরু হয়েছিল। এটি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল৷
1617 সালে, প্যারিসের লুক্সেমবার্গ গার্ডেন তার ধারণক্ষমতা প্রসারিত করে। এগুলি ছিল সংলগ্ন ভূমি যা পূর্বে রোমান ক্যাথলিক চার্চের সন্ন্যাসীর অন্তর্গত ছিল৷
17 শতকে, পার্কটি প্যারিসবাসীদের দ্বারা বিশ্রামের জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা হিসাবে স্বীকৃত ছিল। তাকে দেখতে ভিড় জমাতে লাগল। 18 শতকে, লুক্সেমবার্গ গার্ডেন একটি বাস্তব অনুপ্রেরণা ছিল। পার্কটি ফরাসি লেখক, চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক জিন-জ্যাক রুসো এবং সেইসাথে বিখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং নাট্যকার ডেনিস ডিডেরোট পরিদর্শন করেছিলেন। গাই ডি মাউপাসান্ট বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং ট্রি নার্সারির ভক্ত ছিলেন।
সময় গড়িয়েছে, প্রাসাদ এবং এর পার্কের মালিকরা বদলে গেছে। তাদের সাথে একসাথে, অঞ্চলটি রূপান্তরিত হয়েছিল। মারি ডি মেডিসির নাতি, লুই XIV, বাগানের মাঝখানে ভবনগুলির চারপাশের এলাকা পরিবর্তন করার আদেশ দিয়েছিলেন। এটি Avenue de l'Observatoire এর একটি দুর্দান্ত চিত্রকর্ম দ্বারা পরিপূরক ছিল৷
১৭৮২ সালে এস্টেট পুনরুদ্ধার করা হয়। কাজের সময় পার্ক এলাকার কয়েক হেক্টর জমি নষ্ট হয়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলি কাউন্ট অফ প্রোভেন্স দ্বারা শুরু হয়েছিল, যিনি পরে রাজা লুই XVIII হয়েছিলেন৷
গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পর, যেমন সন্ন্যাসীদের মঠ, পার্কের অঞ্চলটি আরও বড় হয়ে ওঠে এবং আজও তা রয়ে গেছে।
লাক্সেমবার্গ উদ্যানের হৃদয়
পার্কের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ মারিয়া মেডিসি দ্বারা নির্মিত প্রাসাদ। রানী ল্যুভরে জীবন নিয়ে বিরক্ত ছিলেন। সম্ভবত তিনি ইতালিতে তার বাড়ি মিস করেছেন। তাই আমি এস্টেট ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছিপ্যারিসের উপকণ্ঠে, যেখানে আপনি অবসর নিতে পারেন এবং শহরের কোলাহল ভুলে যেতে পারেন৷
স্থপতি, ফ্লোরেন্স মডেল অনুসারে কাজ করে, তবুও অনন্য কিছু তৈরি করেছেন, যা একটি ফরাসি আত্মায় ভরা।
এই স্থাপত্য স্মৃতিস্তম্ভটি সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে, অনেক মালিক পরিবর্তন করেছে। এমনকি একটি কারাগারের ভূমিকা পরিদর্শন করেছেন, যেখানে প্রায় 800 বন্দী রয়েছে। বিখ্যাত বিপ্লবী জর্জেস ড্যান্টনও বন্দী হিসাবে প্রাসাদ ময়দান পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি বলেছিলেন যে তিনি বন্দীদের মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য অন্যথায় আদেশ করেছিল, এবং তাকে নিজেকে তাদের একজন হতে হয়েছিল।
কার্পো ফোয়ারা
সুরম্য ভবন ছাড়াও, প্যারিসের লুক্সেমবার্গ গার্ডেনের অন্যান্য আকর্ষণ রয়েছে। যেমন অবজারভেটরির ফোয়ারা। এটি পার্কের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। ঝর্ণাটি 1874 সালে একযোগে বেশ কয়েকটি স্থপতির যৌথ কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
কাঠামোর কেন্দ্রে, একটি পাহাড়ে, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকার প্রতিনিধিত্বকারী চারজন মহিলা রয়েছেন। তাদের নগ্ন দেহ দিয়ে, তারা আর্মিলারি গোলককে সমর্থন করে, যার অভ্যন্তরে রয়েছে পৃথিবী৷
মাঝের স্তরে আটটি ঘোড়া রয়েছে। এগুলি একটি গতিশীল শৈলীতে তৈরি করা হয়েছে, যেন এগিয়ে চলেছে। তাদের পাশে মাছ, এবং তাদের নীচে রয়েছে কচ্ছপ, জলের জেট ছেড়ে দিচ্ছে৷
লাক্সেমবার্গ গার্ডেনে এটিই একমাত্র ঝর্ণা নয় যা মনোযোগের যোগ্য।
মেডিসি ফাউন্টেন
মেরির আদেশে, পার্কের অন্যতম দুর্দান্ত স্থাপত্য কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। তার নামে যে ঝর্ণাটির নামকরণ করা হয়েছে তার নাম মেডিসি। প্রকল্পের স্থপতি ডস্যালোমন ডি ব্রোসে। প্রাথমিকভাবে, কাঠামোটি একটি গ্রোটো ছিল, কিন্তু পরে পরিবর্তন করা হয়েছে৷
লাক্সেমবার্গ গার্ডেনের মেডিসি ফাউন্টেনে বেশ কিছু ভাস্কর্য রয়েছে। পাশে লেদা এবং রাজহাঁস একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন্দ্রীয় রচনাটি 1866 সালে পরে প্রকাশিত হয়েছিল। অগাস্ট ওটিন এর লেখক হন। এটি পলিফেমাসের পৌরাণিক কাহিনীর একটি দৃষ্টান্ত: নীচে, নগ্ন গ্যালাটিয়া এবং অ্যাসিস একে অপরের বাহুতে শুয়ে আছে এবং তাদের উপরে, লাফ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, একটি বিশাল সেন্টার।
ঝর্ণার সামনের অংশটি পুকুরের মতো তৈরি। এর জলে বেশ কিছু প্রজাতির মাছ বাস করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ক্যাটফিশ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়।
ভাস্কর্য
বাগানের ঘূর্ণায়মান পথ ধরে হাঁটলে আপনি আরও অনেক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন দেখতে পাবেন। পার্কের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ভাস্কর্য রয়েছে।
ফ্রেডেরিক বার্থোল্ডির প্রথম "স্ট্যাচু অফ লিবার্টি", ফরাসি রাণীদের মূর্তি, দেশের বিশিষ্ট মহিলা, উদাহরণস্বরূপ, লুইস অফ স্যাভয় - এইগুলি মাত্র কয়েকটি মহিমা। এই সব লুক্সেমবার্গ গার্ডেনে রাখা আছে।
এখানে প্রাচীন গ্রীক মিথ এবং প্রাণীদের নায়কদের ভাস্কর্য রয়েছে।
শিল্প জাদুঘর
আর একটি জায়গা যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে তা হল পার্কে। এটি লুক্সেমবার্গ গার্ডেনের একটি জাদুঘর। 18 শতকের মাঝামাঝি সময়ে, এর দেয়ালের মধ্যে রাজকীয় চিত্রকর্মের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটিই যাদুঘরের ইতিহাসের সূচনা বিন্দু হয়ে ওঠে, এটিকে প্রথম স্থান করে তোলে যেখানে অনন্য মাস্টারপিসগুলি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল৷
19 শতকের শুরুতেসমসাময়িকদের কাজ এখানে প্রদর্শন করা হয়েছিল, যা শিল্পীরা তাদের জীবদ্দশায় তাদের শিল্প প্রদর্শন করতে দেয়।
আজ জাদুঘরটি মূল প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত, বিষয়ভিত্তিক ইভেন্টের আয়োজন।
পার্কের প্রকৃতি
অবশ্যই, প্রাসাদ এবং পার্কের মিলনস্থলটি এর ল্যান্ডস্কেপ এলাকা ছাড়া কল্পনা করা যায় না। পার্কের গাছপালা উষ্ণ সময় জুড়ে ফুল ফোটানো বন্ধ করে না। এখানে কর্মরত বাগানিরা সব সময় ব্যস্ত থাকেন। বছরে তিনবার তারা ফুলের বিছানায় গাছের ধরন পরিবর্তন করে। এইভাবে, একটি অবিশ্বাস্য আলংকারিক ল্যান্ডস্কেপ অর্জন করা হয়৷
উষ্ণতম মাসগুলিতে, দর্শকরা পাত্রযুক্ত গাছপালা দেখতে পারে। এগুলি হল খেজুর, ওলেন্ডার, কমলা এবং ডালিম গাছ। একই সময়ে, কিছু প্রজাতি এখানে 200 বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্য সময়ে এগুলি গ্রিনহাউসে প্রদর্শিত হয়৷
আপেল এবং নাশপাতি গাছ, সন্ন্যাসীদের দ্বারা লাগানো, বেড়ার কাছে তাদের শাখাগুলি ছড়িয়ে দেয়।
বাগানের সমস্ত গাছপালা রোগ এবং খারাপ আবহাওয়া খুব ভালভাবে সহ্য করে। চেস্টনাট, লিন্ডেন, ম্যাপেলের মতো গাছগুলি একটি অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করে এবং এটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল৷
আধুনিক অবসর
আজ লুক্সেমবার্গ গার্ডেন প্যারিসে বিশ্রাম নেওয়ার সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি। বয়স্ক দম্পতিরা এখানে আসে ছায়াময় রাস্তায় ধীরে ধীরে ঘুরে বেড়াতে, বেঞ্চে তাদের প্রিয় বই পড়তে।
সক্রিয় প্রেমীরা ঘোড়ায় টানা গাড়ি ভাড়া করতে পারেন বা পোনি চালাতে পারেন৷ পার্কে বাস্কেটবল এবং টেনিস খেলার জায়গা রয়েছে। যদি তুমি পছন্দ করমনের খেলা, স্থানীয় পুরানো টাইমারদের সাথে দাবা খেলার চেষ্টা করুন।
ক্ষুদ্রাকৃতির পাথরের থিয়েটার "গুইগনোল" কোনও শিশুকে উদাসীন রাখবে না। প্রায় প্রতিদিনই রয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ পারফরম্যান্স। বাচ্চারা স্লাইড এবং দোল সহ বিশেষ খেলার মাঠে মজা করতে পারে। এখানে আপনি এমনকি পুরানো ক্যারোসেলগুলিতে চড়তে পারেন বা বৃহত্তম গ্র্যান্ড বেসিন পুকুরে একটি নৌকা চালাতে পারেন৷
প্রায়শই, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা গ্রিনহাউসের দেয়ালের কাছে থাকে।
কাজের সময়
এটা লক্ষণীয় যে পার্কটি সবসময় দেখার জন্য খোলা থাকে না। এর কারণ হল কর্মচারীরা এটিকে উন্নত করতে, এলাকা পরিষ্কার করতে এবং ভাঙ্গন দূর করতে নির্দিষ্ট কাজ করে।
এপ্রিল থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত, বাগানটি সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সন্ধ্যা নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে। নভেম্বরে, সময়সূচী পরিবর্তন হয়, দেখার জন্য কম সময় থাকে - সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত।
পার্কে যাওয়া সহজ - শুধু সাবওয়ে ট্রেনে চড়ে ওডিয়ন স্টেশনে নামুন।
আপনি যদি ভ্রমণে যাচ্ছেন, তাহলে প্যারিসের দর্শনীয় স্থানগুলোতে আপনি যা দেখতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করতে ভুলবেন না। তাদের কারও বর্ণনা খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়, তবে তারা যেমন বলে, একবার দেখে নেওয়া ভাল। অতীতের জগতে ডুবে যাওয়ার, ইতিহাসকে স্পর্শ করার, নিজেকে একজন রাণী হিসাবে কল্পনা করার চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে তার এস্টেটের চারপাশে হাঁটা?
